Sunday, July 7, 2019

খাস জমি গ্রহণের নিয়ম ও উপযোগীতা

খাস জমি গ্রহণের নিয়ম ও উপযোগীতাঃ
খাসজমি

খাস জমির ধারণা

যে জমির মালিক সরকার তাকে খাস জমি বলে।
সরকারি ভূমি অফিসে ৮ নম্বর রেজিষ্টারের এক নম্বর খতিয়ানভুক্ত সকল জমি খাস জমি। ভূমি সংস্কার অভিযানের আওতায় বন্দোবস্ত প্রদানের জন্য খাস কৃষি জমির মধ্যে নিম্নোক্ত জমি অন্তর্ভুক্ত হবেঃ

১। নদী গর্ভ সমুদ্রগর্ভ থেকে জেগে ওঠা জমি।
২। কালেক্টর পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে এমন খাস কৃষিজমি এর আওতায় আসবে।
৩। মালিকানা এবং দাবিদার ছাড়া জমি যা এখন নিরুদ্দেশ বা মৃত মালিকের নাম রেকর্ডভুক্ত আছে।
৪। সরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে বন্দোবস্ত দেওয়া যাবে এমন খাস কৃষিজমি এর আওতায় আসবে।
৫।বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি সংস্থার অধীনে নেস্ত কৃষি উপযোগী পতিত অথবা চাষাদীন জমি পুনর্গ্রহণ সাপেক্ষে।

খাস জমির প্রকারভেদ

খাস জমি দুই ধরনের। যেমন :
১। কৃষি খাস জমি
২। অকৃষি খাস জমি

ভূমিহীন পরিবারের সংজ্ঞা:

সহজ কথায় বললে বলা যায়, যার ভূমি নেই সেই ভূমিহীন। সরকারি মতে ভূমিহীন পরিবারের সংজ্ঞা হচ্ছে,

১। যে পরিবারের বসতবাড়ি এবং কৃষি জমি নেই কিন্তু পরিবারটি কৃষি নির্ভর।
২। যে পরিবারের বসতবাড়ি আছে কিন্তু কৃষি জমি নেই অথচ কৃষি নির্ভর।
৩। যে পরিবারের বসতবাড়ি এবং কৃষি জমি আছে কিন্তু এর মোট পরিমাণ ১০ শতাংশের কম অথচ কৃষি নির্ভর।

ভূমিহীন হওয়ার কারণ

১। ভূমি অধিগ্রহণ।
২। জাল দলিল।
৩। অবৈধ পর্চা প্রস্তুত।
৪। অবৈধ নামজারি।
৫। দুর্নীতি পরায়ন জরিপ।
৬। সম্পত্তির অবৈধ বন্দোবস্ত।
৭। মামলা মোকাদ্দমা।
৮। নদী ভাঙ্গন।
৯। প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
১০। জনসংখ্যা বৃদ্ধি।
১১। বদ অভ্যাস।
১২। সচেতনতার অভাব।

ভূমিহীনদের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জমি প্রাপ্ত ব্যক্তি

১। শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা।
২। নদীভাঙ্গা পরিবার।
৩। সক্ষম পুত্র সহ বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা পরিবার।
৪। কৃষি জমিহীন ও বাস্তুভিটাহীন পরিবার।
৫। অধিগ্রহণের ফলে ভূমিহীন হয়ে পড়েছে এমন পরিবার
৬। 10% বসতবাড়ি আছে কিন্তু কৃষি যোগ্য জমি নেই এবং এরূপ কৃষি নির্ভর পরিবার
৭। অন্যান্য পরিবার

ভূমিহীনদের কাছ থেকে দরখাস্ত আহবান করার নিয়ম

১। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জেলা তথ্য অফিসার জেলার বড় বড় হাট বাজারে লোক সমাগমের দিনে মাইক যোগে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা করবেন।

২। উপজেলার অথবা থানার সকল বাজারের ইজারাদার এবং ইউনিয়নের দফাদার, মহলাদারদের নিকট থেকে ঢোলসহরত এর মাধ্যমে ব্যাপক হারে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করতে হবে এবং তাদের নিকট থেকে তামিল রিপোর্ট সংগ্রহ করতে হবে।

৩। উপজেলার থানার সকল অফিস রাজস্ব অফিস, থানা, ইউনিয়ন, তহশীল ইত্যাদি সকল অফিসের নোটিশ বোর্ডে বিজ্ঞপ্তি টাঙ্গাতে হবে। বিভিন্ন সমিতিতে এ সম্পর্কে জানাতে হবে। উক্ত সময় উপজেলার মাসিক সভায় আলোচনার জন্য এই প্রচার কার্যক্রম কে আলোচ্যসূচি ভূক্ত করতে হবে।

৪। উপজেলা থানার সকল কর্মকর্তাকে এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ছাত্র দের উপজেলা থানা পরিষদ থেকে পত্র দিয়ে দরখাস্ত পূরণে ভূমিহীনদের সহায়তা করার জন্য অনুরোধ জানাতে হবে।

খাস কৃষি ও অকৃষি জমি বন্দোবস্ত পাওয়ার আবেদন ও অন্যান্য বিষয়

১। সহকারী কমিশনার ভূমি এর নিকট সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে দরখাস্ত পেশ করতে হবে।

২। দরখাস্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মেম্বার কর্তৃক সত্যায়িত দুই কপি ফটো জমা দিতে হবে।

৩। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান কর্তৃক নাগরিক সার্টিফিকেট দিতে হবে।

৪। জমি স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে দেওয়া হবে তবে বিধবা এর ক্ষেত্রে একক নামে দেওয়া হবে।

৫। ভূমিহীন একটি পরিবার কতটুকু খাস জমি পাবে তার নির্দিষ্ট পরিমাণ রয়েছে। পরিমাণ অনুযায়ী জমি পাবে।

৬। বরাদ্দকৃত খাস জমি উত্তরাধিকার সূত্র ব্যতীত অন্য কোনভাবে কারো নিকট হস্তান্তর করা যাবে না করা হলে তার বরাদ্দ বাতিল হয়ে তা খাস জমিতে পরিণত হবে।

খাস জমি নীতিমালা

১। খাস জমি বিক্রয় করা যাবে না।

২। খাস জমি দান, এওয়াজ বদল করা যায় না।

৩। খাস জমির মালিকানা উত্তরাধিকার সূত্র ছাড়া পরিবর্তন করা যায় না।

৪। খাস জমি বর্গা দিলে মালিক ওই জমির অধিকার হারাবেন।

৫। স্বামী তার স্ত্রীকে নির্যাতন করলে সম্পূর্ণ খাস জমির মালিক হবেন তার স্ত্রী। এক্ষেত্রে জমির বরাদ্দ দেওয়া হবে স্ত্রীর নামে।

৬। খাস জমি বন্ধক দেওয়া যাবে না।

৭। খাস জমি পতীত রাখা যাবে না।

৮। খাস জমি প্রাপ্ত দম্পতির বিবাহ বিচ্ছেদ হলে উভয়েই সম্পত্তি হারাবে, সরকারি খাতে চলে যাবে।

শেয়ার করুন

Author:

Etiam at libero iaculis, mollis justo non, blandit augue. Vestibulum sit amet sodales est, a lacinia ex. Suspendisse vel enim sagittis, volutpat sem eget, condimentum sem.

0 coment rios: