গবাক্ষি বা শেওড়া গাছের উপকারিতা
শেওরা গাছ পরিচিতিঃ
প্রথমেই বলে রাখি বাংলাদেশ এই গাছটির প্রচলিত নাম শেওড়া। চলতি কথায় আমরা একে শাঁরা গাছ বলে ডাকি। বাংলায় একটা কিংবদন্তি আছে যে এ গাছে পেত্নী বাস করে। তাই কোন কুরূপা মেয়ের রূপের সঙ্গে তুলনা করে বলে শারা পেত্নী। অবশ্য পরবর্তীকালে এর একটি নাম ভূতাবাসো বলা হয়েছে। এর কারণ এর মূল দেশে সাপ ও বিছে থাকতে ভালোবাসে। এ গাছটিকে হিন্দি পাশাপাশি অঞ্চলে শাহরা, বাসি হরি বলে উড়িষ্যার অঞ্চলে শাহারা বলে। এই গাছ বাংলা বিহার উড়িষ্যা মধ্যপ্রদেশ আরো অন্যান্য অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত ভাবে জন্মে। তবে খুব উঁচু পাহাড়ি অঞ্চলে হতে দেখা যায় না। পাতা কাটলে বা গাছ কাটলে দুধ বের হয়। মার্চ-এপ্রিল মাসে ফুল হয় আকারে মটর এর মত হলদে রঙের ফল হয়। পাকে জুন মাসে। এর আরেক নাম ক্ষীর নাশ। কারণ পাতা ছাগীকে খাওয়ালে দুধ চলে যায়।
এই গাছটি সম্পর্কে বিভিন্ন প্রথা চলে যে,
যাদের বউ বাঁচে না তাদের পুনর্বার বিয়ের দিনে এই গাছের সঙ্গে আগে মালাবদল করে তারপর বিয়ে করে থাকেন।
আরেকটি তথ্য -
ছাগল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার জন্য এই গাছের একটি পাতা ছাগলের জিভের তলায় দিয়ে দেয়। তাহলে সে জোরে ডাকতে পারে না। শুধু গো গো শব্দ করে।
রোগব্যাধিতে শেওড়া গাছের ব্যবহারঃ
১। অর্শ রোগেঃ
শেওরা ছালের রস 30 ফোটা মাত্রায় আধ কাপ দুধের সঙ্গে সকালে ও বিকালে দুই বার খাওয়ালে প্রথমে অর্শের রক্ত পড়া বেড়ে যাবে, তারপর ওই রসে পাক করা ঘি 1 চা চামচ করে দুধের সঙ্গে খেলে ওটা সেরে যাবে। তবে প্রথমে একটু না বৃদ্ধি হলে অর্শের বলি চুপসে যাবে না। তাই প্রথম রস করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে দ্রব্য শক্তিতে একটু বাড়িয়ে নেওয়া।
২। কোষ্ঠবদ্ধতাঃ
এটা যাদের সাময়িক নয় প্রত্যহ ওই অসুবিধে টাই ভুগে থাকেন, তারা শেওড়া পাতা অথবা মূলের চালের রস দিয়ে ঘি পাক করে রাখবেন। প্রত্যহ প্রাতে আধ বা 1 চা চামচ করে একটু গরম দুধের সঙ্গে কিছুদিন খেয়ে দেখুন ওই কোষ্টবদ্ধের ধাতটা বদলে যাবে।
৩। হাঁপানি ও কাশিঃ
সকালে উঠলেই অচল। এটাতে যদিও সারবে না তবু উপশম তো হবে। আধ চা চামচ ঘি এর সঙ্গে দুই চার ফোঁটা শেওরা ছালের রস মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। এটাতে কিছুক্ষণ ভালো থাকবেন। তবে আরো বেশি সময় ভালো থাকবেন, যদি চিরতার গুঁড়ো সিকি বা আধা গ্রাম এর সঙ্গে মিশিয়ে চেটে খেয়ে ফেলবেন
৪।শ্লীপদে বা গোদে (Filaria):
লজ্জাকর রোগ, সর্বদা ভয়, কেউ না দেখে ফেলে, কিন্তু ঢাকা কি যায়? এ রোগে মুক্তি পাওয়ার জন্য গোমূত্র খেলে যদি এ থেকে উদ্ধার পাওয়া যায়, সেটা কি ভালো না? তাই বলছি- শেওরা ছালের রস আধ বা 1 বা দুই-তিন চাচামচ গোমূত্রের সঙ্গে মিশিয়ে প্রত্যহ সকালে একবার করে খান তবে স্বাস্থ্য ভালো থাকলে বৈকালে দুইবার খাবেন। তবে সবত্সা হওয়ার পূর্বের যে গরু তার মূত্র হলেই ভাল হয়।
৫।দাঁতের পাথুরীতেঃ
দাঁতের গোড়ায় পাতুরি জন্মে যাদের তারা শেওড়া গাছের ছাল চূর্ণ কোন মা জনের সঙ্গে সিকি ভাগ মিশিয়ে সেই মাজন দিয়ে দাঁত মাজুন এর দ্বারা দাঁতের গোড়ার পাথরগুলি হয়ে উঠে যাবে
৬। শ্বেতির দাগেঃ
শেওরা বীজের তেল শেতের দাগে লাগালে এক মাসের মধ্যে ওগুলি মিলিয়ে যেতে শুরু করবে। তবে যেখানে লোম উঠে না, সেখানে কোনো কাজ হয় না। অন্য জায়গায় স্বাভাবিক হয়।
0 coment rios: