সর্বশেষ

Thursday, May 12, 2022

গরু ও ছাগলের খামারের স্থান নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয়

গরু ও ছাগলের খামারের স্থান নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয়

গরু ও ছাগলের খামারের স্থান নির্বাচনের বিভিন্ন বিষয় (Different matters of selecting farm location for Cows and Buffaloes) : গবাদি পশুর খামার স্থাপনের জন্য সর্বপ্রথম প্রয়ােজন সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আন্তরিক আগ্রহ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা । খামার স্থাপনের জন্য প্রথমেই নিম্নলিখিত বিষয়গুলাের দিকে নজর দিতে হবে



১। খামার বিষয়ক জ্ঞান (Farm related knowledge): এ বিষয়ে খামারীর নিজস্ব জ্ঞান, চিন্তা-ভাবনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, আন্তরিক আগ্রহ, প্রযুক্তিগত জ্ঞান, প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পর্যাপ্ত জনশক্তির সমাবেশ, খামার পরিচালনা বিষয়ে নিজস্ব জ্ঞান অথবা এ ধরনের জ্ঞানসম্পন্ন লােকের সমাবেশ ও বিষয়গুলাের সমন্বয় ঘটাতে হবে।


২। স্থান নির্বাচন (Site selection): লাভজনক খামার স্থাপনের জন্য আদর্শ স্থান সাধারণত লােকালয় থেকে দলে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে যেখানে প্রাকৃতিক আলাে ও বাতাস সহজ প্রাপ্য কিন্তু জলাবদ্ধতা সৃষ্টি সম্ভাবনা কম এবং যােগাযােগ ব্যবস্থা, বৈদ্যুতিক সুবিধা ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের সুবিধা বিদ্যমান। তবে খামারের আকার ছােট হলে বসতবাড়ী সংলগ্ন খােলামেলা স্থানে খামার স্থাপন করা যায় ।


৩।সম্পদের সমন্বয় (Co-ordination of assets): খামারের জন্য নির্দিষ্ট জমি, মূলধন ও দক্ষ কর্মীর সমাবেশ ঘটাতে হবে।।


৪।খামারের উপকরণ (Farm essentials): ও উন্নত জাতের গবাদিপশু, খামার স্থাপনের জন্য প্রয়ােজনীয় সরঞ্জাম। খাদ্য সামগ্রীর উৎস ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে ।


৫। খামারের সুযােগ-সুবিধা (Scope & opportunities of farm): ও খামারের উপযুক্ত পরিবেশ, বিশুদ্ধ পানি । সরবরাহ সুবিধা, স্যানিটেশন ব্যবস্থা, পানিপ্রাপ্তি ইত্যাদি।

Monday, January 17, 2022

তারুফী বয়ান : হিজরত নুসরতের কথা

তারুফী বয়ান : হিজরত নুসরতের কথা

তারুফী বয়ান : হিজরত নুসরতের কথা
তারুফী বয়ান : হিজরত নুসরতের কথা

তারুফী বয়ান : হিজরত নুসরতের কথা।আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ পাকের বহুৎ বড়  এহসান, আর ফজল ও করম তিনি নিজ দয়ায়, নিজ মায়ায় আমাদের সকলকে মসজিদে আসার তৌফিক দান করেছেন। আল্লাহ পাক যাদের পছন্দ করেন, তাদেরই মসজিদে আসার তৌফিক দান করেন। তারপর দ্বীনের এক ফিকির নিয়ে বসার সুযোগ দিয়েছেন। এক লাখ বা দুই লাখ চব্বিশ হাজার পয়গাম্বর যে কাজ করে গেছেন আমাদের সেই কাজে লাগিয়েছেন। সে জন্য মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করি, আলহামদুলিল্লাহ্।

কুরআনের ঘোষণা এই যে, হে দুনিয়ার মানুষ তোমরা আল্লাহ কে এক বলে স্বীকার করে নাও, তোমরা কামিয়াব হয়ে যাবে। অর্থাৎ তোমরা জান্নাতি হয়ে যাবে।

মানুষ যখনই দ্বীন থেকে গাফেল হয়ে গেছে, আখিরাতকে ভূলে দুনিয়ামুখী হয়েছে, একমাত্র আল্লাহপাকের উপর ভরসাকে ছেড়ে সৃষ্ট বস্তুর উপর একীন করেছে তখনই আল্লাহপাক মানুষের কামিয়াবী ও নাজাতের জন্য পর্যায়ক্রমে লক্ষাধিক নবী রাসূলকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। প্রত্যেক নবী রাসূলই মানুষকে এক আল্লাহর দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সমস্ত নবী ও পয়গাম্বর কষ্ট মুজাহাদা সহ্য করে গেছেন।

Read Also: তাবলীগের ৬ (ছয়) নম্বর বয়ান

হযরত ইব্রাহীম আঃ নমরুদের আগুনে প্রবেশ করেছেন। হযরত ইউনুছ আঃ মাছের পেটে গিয়েছিলেন, হযরত ঈসা আঃ এর পরে ছয়শত বছরের উর্ধে দ্বীনের দাওয়াত না থাকার কারণে কাবাগৃহে ৩৬০ টি দেব মূর্তি আশ্রয় নিয়েছিল। আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়ে দ্বীনের দাওয়াত যখন মানুষের দ্বারে দ্বারে পৌঁছাতে লাগলেন তখন তাকে অপমানিত ও লাঞ্চিত হতে হয়েছে। যে দেহে মশা মাছি পড়া হারাম ছিল, সেই দেহে তায়েফবাসীরা পাথর মেরে শরীর রক্তাক্ত করে দিয়েছিল। এমনকি তাহার জুতা মোবারক পায়ে আটকে গিয়েছিল। তবুও তিনি তাদের অভিশাপ দেন নাই। 

Read Also: কুতুব উদ্দিন শাহ্ (বুরুজ) পাগল পন্হী ফকির এর জীবন কাহিনী

মক্কার কাফেররা যখন চরমভাবে কষ্ট দিতে লাগল তখন সাহাবীদের দুটি জামাত আফ্রিকার আবিসিনিয়া নামক দেশে হিজরত করেন। আবিসিনিয়ার অধিবাসীরা এই জামাতকে সর্বদিক থেকে সাহায্য সহযোগিতা করে কিন্তু দ্বীন কবুল করে নাই। ফলে সেখানে দ্বীন জিন্দা হয় নাই। পরবর্তীতে নবিজী (সাঃ) আল্লাহ পাকের হুকুমে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনা বাসীরা তাঁহাকে জান-মাল ও সময় দিয়ে নুছরত করেন ও সেখানে দ্বীন জিন্দা হয়।পাখি যেমন এক ডানা দিয়ে উড়তে পারে না, সাইকেল যেমন এক চাকা দিয়ে চলতে পারে না ঠিক তেমনি হিজরত এবং নুসরত ছাড়া দ্বীন জিন্দা হয় না।যারা হিজরত করেছিল তারা মুহাজের নামে এবং যারা নুছরাত করেছিল তাহারা আনছার নামে পরিচিত।

Read Also: সার্বিকভাবে ইসলামিক জীবন পরিচালনার জন্য কিছু নিয়মিত আমল

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরতকারী এবং নুসরতকারী অর্থাৎ মোহাজের এবং আনসারদের জন্য গুনাহ মাফের দোয়া করেছেন, তাদেরকে খাটি মুমিন বলেছেন। তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক রিযিক এবং তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত।বিশেষ করে আনসারদের জন্য অনেক দোয়া করেছেন। নবীজী এক জায়গায় বলেছেন, হে আল্লাহ আপনি আনসার ও তাদের পুত্রদের এবং তাদের পৌত্রদের মাফ করে দিন। অন্য বর্ননায় এরকম আছে যে তাদের স্ত্রীগণকেও মাফ করে দিন। তাদের প্রতিবেশী এবং গোলামদের মাগফিরাতের জন্যও দোয়া করেছেন।

আল্লাহ পাক কুরআনে বলেছেন "তোমরা যদি একটি কথাও জান তবে অন্যের নিকট পৌঁছিয়ে দাও।" 

ভাই দ্বীনের দাওয়াতের একটি নকল হরকত নিয়ে এক মুবারক জামায়াত আপনাদের মহল্লার মসজিদে উপস্থিত।আমরাতো ভাই অল্প সময়ের জন্য আপনাদের এলাকায় হিজরত করে এসেছি এজন্য আপনাদের কাছ থেকে নুসরত বা সহযোগিতা কামনা করছি। হতে পারে আপনাদের এবং আমাদের সম্মিলিত চেষ্টার ফলে এই মহল্লায় দ্বীনী পরিবেশ কায়েম হবে ইনশাআল্লাহ। জামায়াত এই মসজিদে ৩ দির থাকবে। কোন কোন ভাই নুছরতের জন্য তৈরি আছেন।

Read Also: তাবলীগের ৬ (ছয়) নম্বর বয়ান

Friday, January 7, 2022

ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা

ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা

কেনো খাবেন ছোটমাছ? ছোট মাছ খেলে কী কী উপকার হয় ?




ছোট মাছ খাওয়ার উপকারিতা-


ছোট মাছ আকারে ছোট হলেও পুষ্টিতে ছোট নয়। পুষ্টিগুণের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, বড়, মাঝারি বা ছোট মাছে কোনো তফাৎ নেই। বড় মাছের পুষ্টিগুণ যা, ছোট বা মাঝারি আকারের মাছের পুষ্টিগুণও তা। অথচ দামের দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, বড় মাছের দাম এতই চড়া যে তা ক্রয় করা আমাদের অনেকেরই ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে ছোট মাছ দামে অনেক সস্তা। বড় মাছের মতো ছোট মাছে আমিষের পরিমাণ বেশি থাকে বলে ছোট মাছও আমিষ জাতীয় খাবারের অন্তর্ভুক্ত। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোট মাছে আমিষের পরিমাণ হলো ১৪-১৯ ভাগ এবং মাছের আমিষ হলো একটা উন্নত মানের আমিষ। এ আমিষ আমাদের দেহের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয়পূরণের কাজে লাগে বেশি।


আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট মাছ পাওয়া যায়। যেকোনো পুকুর, নদী, খাল, বিল অথবা জলাশয়ে ছোটমাছ পাওয়া যায়। তাই ছোট মাছ নিয়মিত খেলে যেসব উপকারিতা পাবেন—


ছোট মাছে আছে প্রচুর ক্যালসিয়াম। কাঁটাসহ ছোট মাছ ক্যালসিয়ামের এক অনন্য উপাদান। মলা, ঢেলা, চাঁদা, ছোট পুঁটি, স্বরপুঁটি, ছোট চিংড়ি, কাঁচকি, কৈ, শিং, মাগুর, মৌরলা, কাজলি, পিউলি, বাঁশপাতা, পাতাশি, ইত্যাদি জাতীয় মাছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, প্রোটিন এবং ভিটামিন ‘এ’ বিদ্যমান। 


মানবদেহে দৈনিক প্রচুর ক্যালসিয়ামের চাহিদা থাকে। বিশেষ করে বাড়ন্ত শিশু, গর্ভবতী মা এবং প্রসূতি মায়েদের ক্যালসিয়ামের চাহিদা আরও বেশি। হাড় ও দাঁত গঠনে ক্যালসিয়াম অত্যন্ত দরকারি। তাই প্রতিদিন আমাদের ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ ছোট মাছ খাওয়া উচিত।


উঠতি বয়সী শিশুদের জন্য প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-৩ এবং ভিটামিন ডি যুক্ত গুঁড়া বা ছোট মাছ খুবই উপকারী।


ছোট মাছে অসম্পৃক্ত চর্বি আছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। এ ছাড়া আয়রন, প্রোটিন, ফসফরাস, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি২, ফ্যাটি অ্যাসিড, লাইসনি ও মিথিওনিনেরও ভাল উৎস ছোট মাছ।


ছোট মাছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ থাকে যা রাতকানা, অন্ধ হয়ে যাওয়া ছাড়াও দৈনন্দিন অনেক শারিরীক সমস্যা দূর করতে সক্ষম। শিশুদের রাতকানা রোগ ঠেকাতে ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ মলা, ঢেলা ও গুঁড়া মাছ খাওয়ান। দৃষ্টিশক্তির জন্যও গুঁড়া মাছ দরকার।


যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ গুঁড়া মাছ তাদের ব্ল্যাডপ্রেসার কমাতে সাহায্য করবে।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খনিজ লবণ সমৃদ্ধ গুঁড়া মাছ উপকারী। হৃদরোগী, স্ট্রোকের রোগীর ও গর্ভবতী মা ও দুগ্ধদানকারী মায়ের জন্য গুঁড়া মাছ খুবই উপকারী।


প্রজাতিভেদে ছোট মাছের পুষ্টিগুণ-


পুঁটি: প্রতি ১০০ গ্রাম পুঁটি মাছে আছে ১০৬ ক্যালরি শক্তি। এর ১৮.১ গ্রাম প্রোটিন, ২.৪ গ্রাম চর্বি, ১১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। দাঁত ও হাড়ের গঠনে এটি সাহায্য করে।


ট্যাংরা: ১০০ গ্রাম ট্যাংরা মাছে ১৪৪ ক্যালরি শক্তি মিলবে। এতে প্রোটিন ১৯.২ গ্রাম, চর্বি ৬.৫ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৭০ মিলিগ্রাম। আয়রন আছে ২ মিলিগ্রাম। রক্তশূন্যতার রোগীদের ট্যাংরা মাছ খাওয়া উচিত।


মলা: রাতকানা রোগ, ভিটামিন ‘এ’-র স্বল্পতাজনিত চোখের সমস্যা রোধে মলা মাছ খুবই কার্যকর। এতে ক্যালসিয়াম অনেক। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে এই মাছে, যা হৃদ রোগীদের জন্য ভালো। ১০০ গ্রাম মলা মাছে প্রায় ৮৫৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম আছে। আরও আছে ৫.৭ মিলিগ্রাম আয়রন, ভিটামিন ‘এ’ ২০০০ ইউনিট এবং ৩.২ মিলিগ্রাম জিংক।


কাঁচকি মাছ: ১০০ গ্রাম কাচকি মাছে ১২.৭ গ্রাম প্রোটিন আছে। আছে ৩.৬ গ্রাম চর্বি, ৪৭৬ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ২.৮ মিলিগ্রাম আয়রন। এই মাছ কোটারও ঝামেলা নেই, ধুয়ে বেছে খেয়ে নেওয়া যায়।


ফলি: কাঁটাযুক্ত এই মাছের প্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিন ২০.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০৩ মিলিগ্রাম, আয়রন ১.৭ মিলিগ্রাম ও ফসফরাস ৪৫০ মিলিগ্রাম।


ছোট মাছের সার্বিক পুষ্টিগুণ (প্রতি ১০০ গ্রামে)


১. জলীয় অংশ = ৭৫.০ গ্রাম


২. খনিজ পদার্থ = ১.৪ গ্রাম


৩. ক্যালসিয়াম = ১১০ মিলিগ্রাম


৪. প্রোটিন/আমিষ = ১৮.১ গ্রাম


৫. চর্বি/ফ্যাট = ২.৪ গ্রাম


৬. কার্বোহাইড্রেট = ৩.১ গ্রাম


৭. ভিটামিন-সি = ১৫ মিলিগ্রাম


৮. লৌহ বা আয়রন = ১.০ মিলিগ্রাম


৯. এনার্জি = ১০৬ কিলোক্যালরি


কাজেই এ কথা বলা যায়, বড় মাছের মতো ছোট মাছও অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। অনেক দামি বড় মাছ না খেতে পারলে আফসোস করার কোনো কারণ নেই। দেহের পুষ্টি সাধন ও স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য বড় মাছের মতো ছোট মাছের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং ছোট মাছ বলে তার প্রতি অবহেলা বা অনীহা প্রদর্শন না করে এগুলোকে সামর্থ্যনুযায়ী নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন।

Thursday, October 17, 2019

মূলার বীজ উৎপাদন পদ্ধতি : যেভাবে মূলার বীজ উৎপাদন করতে হয়

মূলার বীজ উৎপাদন পদ্ধতি : যেভাবে মূলার বীজ উৎপাদন করতে হয়

যেভাবে মূলার বীজ উৎপাদন করতে হয়ঃ


মূলা
শীতকালীন সবজিসমূহের মধ্যে মূলা বাংলাদেশের েএকটি অন্যতম সবজি। দেশে মূলা উৎপাদনের জন্যে বিদেশী বীজের উপর নির্ভর করতে হয়।বাংলাদেশে আবাদকৃত বিদেশী মূলার জাত দ্বিবর্ষজীবি এবং স্হানীয় আবহাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে এদের বীজ উৎপাদন হয় না । স্হানীয় আবহাওয়ায় বীজ উৎপাদনে সক্ষম ‘তাসাকিসান মূলা’ এবং ‘বারি মূলা-২’ (পিংকি) নামে দুটি একবর্ষজীবি মূলার জাত উৎদ্ভাবন করা হয়েছে।

মূলার মূল ও পাতা কর্তন পদ্ধতিঃ

মূলার বয়স ৪০-৫০ দিন হলে জমি থেকে সমস্ত মূলা উঠিয়ে জাতের বিশুদ্ধতা, আকৃতি ইত্যাদি বিবেচনা করে বাছাই করতে হবে। বাছাইকৃত মূলার মূলের এক চতুর্থাংশ পাতার দুই তৃতীয়াংশ কেটে ফেলতে হবে। মূলের কাটা অংশ
মূলা চাষ
ডায়াথেন এম-৪৫ (২ গ্রাম/লিটার পানিতে মিশিয়ে এর দ্রবণে ডুবিয়ে নিতে হবে। পরে প্রস্তুত করা বেডে সারি পদ্ধতিতে (৬০*৪৫ সেমি) মূলা গর্তে স্হাপন করে পাতার নিচ পর্যন্ত মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এ পদ্ধতিতে পুণরায় রোপণকৃত গাছ থেকে অধিক পরিমাণ বীজ পাওয়া যায়। বীজ ফসলের জমিতে অধিক পরিমাণ রস থাকা প্রয়োজন।গাছে ফুল আসার পর বিঘা প্রতি ১৫ কেজি ইউরিয়া ও ১৫ কেজি এমপি সার বেডে ছিটিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।প্রতিকূল আবহাওয়ায় বীজ-ফসল যাতে মাটিতে পড়ে না যায় সেজন্য ঠেকনা দিতে হবে।মূলার বীজ ফসলে জাবপোকা দেখা যাওয়া মাত্রই পরিমোর/জোলন/নগস/ম্যালাথিয়ন ২ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। বীজ বপনের পর ৪-৫ মাসের মধ্যেই বীজ সংগ্রহের উপযুক্ত হয়।

মূলা বীজের ফলন বাড়ানোর উপায়ঃ

জমিতে বোরন সার প্রয়োগের মাধ্যমে মূলা বীজের ফলন বাড়ানো যায়।জমিতে বোরনের অভাব থাকলে, সুষম সারসহ মূলার জমিতে প্রতিবিঘায় ১.৫-২.০ কেজি বরিক এসিড/বোরাক্স প্রয়োগ করে মূলার বীজের ফলন বাড়ানো যায়।

Wednesday, October 16, 2019

টমেটো ও বেগুনের জোড় কলম তৈরি করার পদ্ধতি

টমেটো ও বেগুনের জোড় কলম তৈরি করার পদ্ধতি

বেগুনের গিট রোগ
ব্যক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ ও শিকড়ের গিট রোগ বেগুন ও আগাম টমোটোর ব্যপক ক্ষতি করে। মাটিবাহিত এ রোগ থেকে ফসল রক্ষা করা তথা উচ্চ ফলন নিশ্চিত করার জন্য বন্য জাতের বেগুনের উপর জোড় কলম করে টমেটো ও বেগুন চাষের একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে বন্য বেগুনের মধ্যে পীত বেগুন ও কাঁটা বেগুন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন।এদের মধ্যে পীতবেগুনকেই আদিজোড় গাছ হিসেবে ব্যবহার করা ভাল।

জোড় কলম তৈরি করার পদ্ধতিঃ

  • টমেটোর চারা ২৫-৩০ দিন এবং বেগুনের চারা ৪০-৪৫ দিন বয়সের হলে জোড় কলমের উপযুক্ত হয়।
  • বন্য বেগুনের চারা ৬০-৭০ দিনের বা ৪-৫ পাতা বিশিষ্ট হলে তা জোড় কলম করার উপযুক্ত হয়।
  • টমেটো বা বেগুনের চারা বীজতলা থেকে উঠিয়ে শিকড়ের মাটি ধুয়ে কিছুটা পানিসহ একটি পাত্রে ঢুবিয়ে রাখতে হবে ।
  • পীত বেগুনের চারা সহ পলিথিন ব্যাগটি নিয়ে ব্লেডের সাহায্যে চারা ২-৩ পাতাসহ মাথার উপরের অংশ কেটে ফেলতে হবে। কান্ডের কাটা মাথাকে প্রায় ১ সেমি গভীর করে ২ ভাগে লম্বালম্বি করে কাটতে হবে।
  • এরপর আবাদী টমেটো বা বেগুনের চারার মাথার উপরের অংশের প্রায় ৫ সেমি কেটে বড় পাতা ফেলে দিতে হবে। কাটা অংশের নিচের ২ পাশ থেকে প্রায় ১ সেমি লম্বা ‘ভি’ অক্ষরের মত কাটতে হবে।
  • এবার টমেটো ও বেগুনের ‘ভি’ এর ন্যায় মাথাটি (উপজোড়) বন্য বেগুন চারার কাটা স্হানে (আদি জোড়) ঢুকিয়ে দিতে হবে।
  • পরবর্তীতে পলিথিন স্ট্রিপ জোড়াটি ভালভাবে আটকে দিতে হবে । এবং গাছের উপরের অংশে পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
  • জোড়ার স্হানে যেন পানি বেশি না লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।কলম করার কাজ বিকালে করাই ভালো।

কলম গাছের পরিচর্যাঃ

  • কলম করা গাছ বাশের শলা দিয়ে তৈরি খাঁচা ঘরে রেখে পলিীথন ও চট বা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • কলম করার পর প্রতি ৭ দিন দিনে ৩-৪ বার পানি ছিটিয়ে দিয়ে আবার ঢেকে রাখতে হবে।
  • ১ সপ্তাহ পর পর পলিথিন সরিয়ে শুধু চট বা কালো কাপড় দিয়ে ১ সপ্তাহ ঢেকে রাখতে হবে।
  • কলম করার ১৫-২০ দিন পর গাছ মাঠে লাগানোর উপযুক্ত হয়।
উল্লেখ্য যে, জোড় কলম করার জন্য বিশেষভাবে তৈরি এক ধরনের বিশেষ ক্লিপ উপজোড় বা আদিজোড় আটকানোর কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে ।

Friday, October 4, 2019

বারি টমেটো-২ (রতন) চাষ পদ্ধতি

বারি টমেটো-২ (রতন) চাষ পদ্ধতি

বারি টমেটো-২

জাতের টমেটোর বৈশিষ্ট্যঃ

বারি টমেটো-২ জাতের গাছের উচ্চতা ৭৫-৮৫ সেমি। টমেটোর আকার গোলাকার ।বারি টমেটো-২ এর ফলের ওজন ৮৫-৯০ গ্রাম। প্রতি গাছে ৩০-৩৫ টি টমেটো ধরে । গাছ প্রতি টমেটোর ফলন ২-২.৫ কেজি। চারা লাগানোর ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায় এবং প্রায় ২০ দিন পর্যন্ত ২-৩ বার টমেটো সংগ্রহ করা যায়।বারি টমেটো-২ (রতন) জাতটির ব্যাক্টেরিয়া জনিত ঢলে পড়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আছে। উক্ত রতন জাতের টমেটো শীতকালে চাষ উপযোগী।

চাষাবাদ তথ্যঃ

বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে বারি টমেটো-২ চাষ করা যায়। চারা লাগানোর পর ১০৫-১১০ দিন পর্যন্ত জীবনকাল স্হায়ী হয়ে থাকে। টমেটোর চারা রোপণের সময় হচ্ছে কার্তিক-অগ্রহায়ণে। বিঘাপ্রতি টমেটোর ফলন ১০-১২ টন।

বিশেষ গুণাগুণঃ

বারি টমেটো ২ জাতের ফল আকর্ষণীয় লাল হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা আছে ইতিমধ্যেএ জাতটির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে।

Wednesday, October 2, 2019

উন্নত প্রযুক্তিতে টমেটো চাষ পদ্বতি

উন্নত প্রযুক্তিতে টমেটো চাষ পদ্বতি

টমেটো একটি পুষ্টিকর সবজি । এটি শীত ও গ্রীষ্ম উভয় মৌসুমেই চাষ করা যায়।

টমেটোর পুষ্টিমান:- (প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য টমেটো)

ক্যালরী- ২০ কিলোক্যালরী
শ্বেতসার- ৩.৫ গ্রাম
আমিষ- ০.৯ গ্রাম
রাইবোফ্ল্যাভিন- ০.০৩ গ্রাম
ভিটামিন এ- ২০০-৮০০ আন্তঃ একক
থায়ামিন- ০.০৫ মিলিগ্রাম
নায়াসিন- ০.০৬ মিলিগ্রাম
ভিটামিন সি- ১০-১০০ মিলিগ্রাম
ক্যালসিয়াম- ৮ মিলিগ্রাম
আয়রন- ০.০৩ মিলিগ্রাম

টমেটো চাষের মাটি ও জমি তৈরিঃ

দোআঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য উত্তম। জমি ৪-৫ বার বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।এক মিটার প্রস্হ দুই বেডের মাঝখানে ৩০ সে.মি. নালা রাখতে হয়। বিঘা প্রতি ২০-২৫ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।

টমেটো গাছের চার রোপণ দূরত্বঃ

প্রতি বেডে ৬০*৪০ সেমি দূরত্বে চারা রোপণ করতে হয়।

টমেটো চাষে সারের পরিমাণঃ (বিঘাপ্রতি)

ইউরিয়া- ৭০-৮০ কেজি
টিএসপি- ৬০-৭০ কেজি
এমপি- ৩০-৪০ কেজি
গোবর- ২.০-২.৫ টন

[বি.দ্র: ১ বিঘা= ৩৩.৩ শতাংশ]

টমেটো চাষে সার প্রয়োগ পদ্বতিঃ

অর্ধেক গোবর ও টিএসপি সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে দিতে হয়। অবীশষ্ট গোবর চারা লাগানোর পূর্বে গর্তে প্রয়োগ করতে হয়।ইউরিয়া  িএমপি দুই কিস্তিতে চারা লাগানোর ৩য় ও ৫ম সপ্তাহে রিং পদ্বতিতে (গাছের গোড়ার চারদিকে) প্রয়োগ করতে হয়।

টমেটোর অন্তবর্তীকালীন পরিচর্যাঃ

প্রথম ও ২য় কিস্তিতে সার প্রয়োগের পূর্বে পার্শ্বকুশিসহ মরা পাতা ছাঁটাই করে দিতে হয়। এতে রোগ ও পোকার আক্রমণ
কম হয় ।ফলের আকার ও বড় হয় । গাছকে নুয়ে পড়া ও ফলকে পঁচনের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য  /\  আকৃতির ঠেকনা দেওয়ার জন্য বাঁশ বা ধৈঞ্চার খুঁটি দেয়া যেতে পারে ।

গ্রীষ্ম ও বর্ষায় টমেটো চাষ পদ্বতিঃ

গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে টমেটো চাষ করার জন্য নিচের জাতসমূহ অনুমোদন করা হয়েছে।

বারি টমেটো-৪,
বারি টমেটো-৫,
বারি টমেটো-৬,
বারি টমেটো-১০,
বারি টমেটো-১১,
বারি টমেটো-১৩

পলিথিনের ছাউনিতে এসব জাতের আবাদ করতে হয়। ২৩০ সেমি চওড়া ২ টি বেডে লম্বালম্বি ভাবে একটি করে ছাউনীর ব্যবস্হা করা যেতে পারে।এ ক্ষেত্রে ছাউনীর খুটির উচ্চতা ১৫০ সেমি ও মাঝখানের উচ্চতা ২১০ সেমি হয়ে থাকে।একটি ছাউনি ২০*২.৩ মিটার আকারের হয়। চারা লাগানোর পূর্বেই নৌকার ছইয়ের আকৃতি করে ছাউনী দিতে হয় । ছাউনীর জন্য স্বচ্চ পলিথীন নাইলনের দড়ি ও পাটের সুতলী প্রয়োজন।পলিথিন যেন বাতাসে উড়ে না যায় সেজন্য ছাউনীর উপর দিয়ে উভয় পার্শ্ব দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে দড়ি পেচানো থাকে।পাশাপাশি দুই ছাউনীর মাঝে ৭৫ সেমি চওড়া নালা রাখতে হবে, যেন ছাউনী থেকে নির্গত বৃষ্টি নালা দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে যায়।প্রতি ছাউনীতে ২ টি বেড থাকবে । জমি থেকে বেডের উচ্চতা ২০-২৫ সেমি হবে।২ টি বেডের মাঝখানে ৩০ সেমি নালা রাখতে হবে।প্রতিটি ছাউনীতে ৪ টি সারি থাকবে।২৫-৩০ দিন বয়সের চারা প্রতি বেডে ২ সারি করে রোপণ করতে হবে।গ্রীষ্মকালীণ টমেটো গাছে প্রচুর ফুল ধরলেও উচ্চ তাপমাত্রা ও অতিবৃষ্টি পরাগায়নে বিঘ্ন ঘটায়।কাজেই আশানুরুপ ফলন পেতে হলে ‘টমাটোটোন’ নামক কৃত্তিম হরমোন ২০ মিলি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে সিঞ্চন যন্ত্রের সাহায্যে সপ্তাহে ২ বার সদ্য ফু্টা ফুলে স্প্রে করতে হয় । 

সেচ ও নিষ্কাশন ঃ

চারা রোপণের ৩-৪ দিন পর হালকা সেচ ও পরবর্তী প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর হালকা সেচ দিতে হয় । গ্রীষ্ম মৌসুমে টমেটো চাষের জন্য ২-৩ দিন পর পর সেচের প্রয়োজন হয় । টমেটো গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না ।সেচ অথবা বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্হা থাকতে হবে।

পোকামাড় ও রোগবালাইঃ

সাদা মাছি ও সুড়ঙ্গ পোকার আক্রমণ দেখা দিলে ডায়াজিনন ১মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে স্প্রে করে দমন করা যায়। ড্যাম্পিং অফ ও আশুধ্বসা রোগের জন্য রিডোমিল ২ গ্রাম/লিটার ব্যবহার করে ভালো ফল পাওয়া যায় ।